Amriter Khonje
অমৃতের খোঁজে
বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই।
আমেরিক্যান ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে। দিনটা আজও ভুলতে পারে না নন্দিনী। যেন স্বাধীনতার একটা অধ্যায়। শুধু আমেরিকার নয়, নন্দিনীরও। তার জীবনের কালো রং-এ লেখা রয়ে গেছে স্বাধীনতার সেই দিন।
দিনটা শুধুই আমেরিকান স্বাধীনতা দিবস নয়। তারও...
বিয়ের বেশ কয়েক বছর পরে। তখন অনীশের কতই বা বয়স? বছর ছয়-সাত হবে।
একদিন অর্ণব এসে বলল “শিকাগো”
“মানে?”
“ওখানে জাহাজ পৌঁছে দিতে হবে। ভাবছি নায়েগ্রা ফলসটা একবার ঘুরে দেখে আসব। এবারের ট্রিপে তুমি আর অনীশও চল-না আমার সঙ্গে”
“ক’মাস?”
“বেশিদিনের জন্য নয়। জাহাজ পৌঁছেই ফ্লাই ব্যাক করে চলে আসতে হবে। চলে আসার আগে যতটা সম্ভব আমেরিকা ঘুরে দেখে নেব। বিশেষ করে নায়েগ্রা ফলসটা”
একা বাড়িতে ঘর সামলাতে আর ছবি আঁকতে আঁকতে ক্লান্ত। একটা ব্রেক চাই। নন্দিনী উচ্ছ্বসিত। আমেরিকার সব থেকে দ্রষ্টব্য স্থানের মধ্যে একটি। আনন্দে বুকটা কেঁপে উঠেছিল।
আগেও জাহাজে চড়েছে। তার মধ্যে আর নতুন আকর্ষণ নেই। প্রথম আমেরিকার মাটিতে পা দিয়ে একটা রোমাঞ্চ ছিল। অনীশের উৎসাহ দ্বিগুণ। জাহাজে চড়া থেকে বিদেশে ঘোরা -পাখিটা খাঁচা ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছে খোলা আকাশে।
অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলল “এই উইকেন্ডে তো সবাই ফুর্তি করছে। চল-না এই উইকেন্ডটাই আমরা নায়েগ্রা ফলস ঘুরে আসি। পুরো উইকেন্ডটাই ওখানে কাটাতে পারব”
নন্দিনীর যেমন ছবি আঁকার নেশা, অর্ণবেরও ছবি তোলার। নন্দিনী নায়েগ্রা ফলস-এর স্মৃতি ক্যানভাসে ধরে রাখতে চায়, আর অর্ণবও ক্যামেরা বন্দি করে ফেলতে পারবে ওই মনোরম দৃশ্য।
মন্দ কী?
অনীশ বাপির দিকে তাকিয়ে বলেছিল “হাউ লাভলি! আই অ্যাম গেটিং এক্সাইটেড অ্যাট দ্য থট”
অনীশ কেন? মনে মনে ওরা তিনজনেই এক্সাইটেড। নায়াগ্রার কথা এত শুনেছে। আমেরিকাতে এসে আর কিছু দেখা না হোক, নায়েগ্রা ফলস না-দেখে গেলে, যাত্রা অসম্পূর্ণ।
বৃহস্পতিবার সকালে সবার আগে সাওয়ারে ঢুকে পড়ল নন্দিনী। যাওয়ার আগে অনেক কাজ বাকি। অর্ণব স্বাভাবিকভাবে সেগুলো ভুলে যায়। সেগুলো তো গুছিয়ে নিতে হবে। অনীশ তো স্বপ্নের আনন্দে আত্মহারা।
“ক্যামেরাটা নিয়েছ?” অর্ণব বাইরের ঘর থেকে হাঁকল “আমার হ্যন্ডব্যাগে ওটা নিয়ে নাও”। যাওয়ার আনন্দে ছবি তোলার নেশাটা আরও বেশি করে চাড়া দিয়ে উঠেছে।
নন্দিনীর তো সঙ্গে করে কিছু নিয়ে যাওয়ার নেই। শুধু মনের ক্যানভাসে ধরে রাখার জন্য একটা নির্মল মন নিয়ে গিয়ে দুচোখ ভরে দেখে আস্বাদন করতে হবে তার রূপ, রস, বর্ণ মুহূর্ত টুকুকে। পরে ইন্ডিয়াতে ফিরে যাতে স্মৃতির জলছবি আঁকতে পারে মনের ক্যানভাস থেকে।
“উফঃ! অত চিৎকার করার কিছু নেই। যাওয়ার আগে সবকিছু ঠিক করে নেব। লেট মি হ্যভ মাই বাথ ফার্স্ট” নন্দিনী অর্ণবের ফোপরদালালিতে একটু বিরক্তই হল।
“মম... ক্যন আই ক্যরি মাই আইপ্যড প্লিজ?”
নন্দিনী উত্তর দিল না। ততক্ষণে সে সাওয়ারে।
দু-ঘণ্টার ফ্লাইট। শিকাগো থেকে বাফেলো।
অর্ণব নন্দিনীর দিকে তাকিয়ে বলল “উই হ্যভ লস্ট টু আওয়ার্স” - নিউ ইয়র্ক শিকাগো থেকে এক ঘণ্টা আগে।
নন্দিনীর হাতে চাপ দিয়ে অর্ণব বলল “হাউ অ্যাম আই গোয়িং টু টেক কেয়ার অফ দ্য জেট ল্যগ নন্দিনী?”
ইন্ডিয়া থেকে এলে টাইমের গন্ডগোলে সব কিছু ওলটপালট হয়ে যায়। শিকাগোতে কয়েকদিন কাটিয়েছে। এখনও ধাতস্থ হতে পারেনি।
যখন শিকাগোতে পৌঁছল, তখন দুপুর আড়াইটে। অর্ণব হার্টজ কার রেন্টাল থেকে গাড়ির চাবিটা নিতে যাচ্ছিল। পেছন থেকে নন্দিনী বলল “হওয়াই ডোন্ট ইউ গেট এ কার উইথ জিপিএস?”
“দে ডোন্ট হ্যভ ইট রাইট নাও নন্দিনী। বাচ্চার মতো করো না। হোটেলটা এখান থেকে বেশি দূর নয়”
অনীশ গাড়ির পেছনের সিটে বসে বলল “ড্যড আই অ্যাম হাংরি। ক্যন আই হ্যভ সাম নাট-নাগেটস প্লী...জ...?”
“ইয়েস... বাট নো সোডা” অর্ণব ড্রাইভিং হুইলে বসতে বসতে বলল।
একটু অস্বস্তি লাগছিল। ইন্টারন্যশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে এলেও জায়েগাটা তার অপরিচিত। ক’দিন শিকাগোতে চালিয়ে হাতটা একটু রপ্ত করে নিয়েছে। এদেশে ঘুরতে হলে নিজেকেই গাড়ি চালাতে হবে। এ তো আর ইন্ডিয়া নয়! যে সেফর ড্রিভেন কারে কেউ তাকে ঘোরাবে!
“অনীশ ডু ইউ রিমেম্বার হোয়াট ইউ হ্যভ প্রমিসড?”
“হোয়াট?”
“তোমার মাতৃভাষা কী?”
“বাংলা”
“আমরা বাংলায় কথা বলি। নয় কি?” নন্দিনী সিট বেল্ট লাগিয়ে অর্ণবের পাশের সিটে বসে বলল।
অনীশ এই কদিনেই গলগল করে ইংরেজি বলছে। শেষে দেশে ফেরত যাওয়ার আগেই না বাংলাটা ভুলে যায়! বয়েসটাকে তো বিশ্বাস নেই। এই বয়সে বাচ্চারা যা পারে তাই হজম করে নেয়। তাও আবার আমেরিকান সভ্যতা বলে কথা! নিজের দেশকেই পাঁচ মেশালি বিদেশ করে ছাড়ল। আর বিদেশে এলে তো কথাই নেই। দেশকে ভুলতে কতক্ষণ?
পরের দিন অনীশ আরও উৎফুল্ল। কাল রাতে ড্যড কথা দিয়েছে ওকে হেলিকপ্টারে চড়াবে নায়াগ্রা ফলস-এর ওপর। এর আগে কখনও হেলিকপ্টার চড়েনি অনীশ। মনে মনে একটা রোমাঞ্চ অনুভব করছিল। নন্দিনীর খুব ইচ্ছে ছিল না। অমন উঁচুতে। একটু ভয় ভয় করে... কিন্তু সেকথা অনীশকে বোঝানো যাবে না।
তখন সকাল এগারোটা। ওরা তিনজনে হেলিপ্যডের দিকে হাঁটতে শুরু করল। আগে ওজন নিয়ে কপ্টারে ঢুকতে হবে যে! কিছুক্ষণের মধ্যে কমলা রঙের হেলিকপ্টারটা আকাশে হারিয়ে গেল। কোথায় যে হেলিপ্যডটা ফেলে এসেছে চারিদিক ঘুরে দেখতেও পেল না অনীশ।
অনীশ পেছনে মায়ের পাশে বসে ছিল। বাঁ হাতটা মুঠো করে, ডান হাতটা মায়ের হাতে জড়িয়ে দুরু দুরু বুকে সামনে তাকিয়েছিল। অর্ণব পাইলটের পাসে বসে মুচকি মুচকি হাসছিল।
“আমরা স্বর্গের কাছাকাছি!”
কপ্টারটা ফলস-এর ওপর ঘুরপাক খেতে অর্ণব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। অনেকদিনের স্বপ্ন। বহুদিনের স্বপ্নকে আজ কাছ থেকে পাওয়া। ছোটবেলা থেকে কত পড়েছে। সেই স্বপ্নের স্বর্গ আজ চোখের সামনে।
নীল আকাশের বর্ণচ্ছটায় জলপ্রপাতের ঘনঘটা। মুহূর্তটা যেন নির্বাক হয়ে থেমে। সেই চোখ জুড়ানো বর্ণ নন্দিনীর দুচোখে। হারিয়ে যাওয়া দৃষ্টিতে মহাশূন্যের দিকে অবাক বিস্ময়ে চেয়ে অর্ণব বলল “জলের রংটা কী?”
অর্ণব-এর কথা টেনে নিয়ে নন্দিনী বলল “সাদা? না গ্রে? না কি নীল?”
দৃশ্যটা নিজের মনের ক্যানভাসে ছবি করে রাখতে চাইছে। পরে দেশে ফিরে সেই রং-এর অ্যাক্রিলিক ব্যবহার করতে পারবে। ছবিটাকে স্পষ্ট ধরে রাখতে চাইছে মনে। নিখুঁত রং। যাতে তার প্রকাশের মধ্যে কোনো খামতি না থাকে। রং-টা চিরপরিচিত না হয়ে বাস্তব হওয়াটাই আবশ্যক।
“নীল” অনীশ বাবা মায়ের কথায় যোগ দিয়ে সরবে বলল “দেখ দেখ, আমি কিন্তু বাংলাতেই বলছি”
অর্ণব জবাব দিল না। ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বার করে কন্টিনিউয়াস মোড দিয়ে ধুপ-ধাপ ক্লিক করতে লাগল। এটুকু সময় যত ছবি তুলে রাখা যায়।
ছোটবেলা থেকেই অর্ণবের ফটোগ্রাফির অসম্ভব নেশা। কলকাতার ভিখিরি থেকে বর্ষাস্নাত এসপ্ল্যানেডের মেট্রো চত্বরের ছবি আজও বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে আছে কলকাতার বাড়িতে। তখন তো আর ডিজিট্যল ক্যমেরা ছিল না। অনেক কষ্টে টাকা জমিয়ে একটা নিকন এস এল আর কিনেছিল। এই মুহূর্তে সেকথা মনে করতে চায় না। যুগটা পালটে গেছে। নন্দিনী তখন জীবনে আসেনি। অনীশ তো নয়ই।
এখন আরেক পৃথিবী। তবুও ছেলেবেলার অভ্যসটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ব্যাপ্তির মধ্যে নতুন সুর খুঁজছিল। আনন্দের সুর। জীবনের ভাল লাগার সুর। বিদেশে নিজেকে আবার নতুন করে পাওয়ার সুর। কেবলই মনে হচ্ছিল ছবিই যথেষ্ট নয়...
...আরও... আরও কিছু...
এই ভাল লাগার পরিমাপটা যেন সরগম থেকে নিখাদে পেখম মেলে ভাসতে চাইছে। মুক্ত পাখির মতো। ধরা থেকে অধরাকে আঁকড়ে ধরার উন্মাদ নেশায়...
আরও... আরও... আরও...
বিবরণহীন সৌন্দর্যের নীলিমায় হারিয়ে যেতে যেতে অর্ণবের হঠাৎ মনে হল ‘যদি এই মুহূর্তে আমি কপ্টার থেকে ঝাঁপ দিই, ও কি আমায় চুমু খাবে? যদি দুহাত মেলে ভেসে বেড়াই, তবে কি বাধাবন্ধনহীন মুক্ত পাখিদের মতোই শূন্যে উড়তে পারব? যদি আর ফেরত না যাই, তবে কী ও আমায় অ্যাকসেপ্ট করবে?”
“আর ইউ অল রাইট?” পাইলটের কথায় অর্ণব যেন স্বপ্ন থেকে ফিরে এল বাস্তব সৌন্দর্যের মখমলে।
“উই আর নাও গোয়িং ডাউন”
“ওক...কে, ওক...কে, থ্যঙ্কস!” অর্ণবের স্বর স্পষ্ট শোনা গেল।
অনীশ সারাক্ষণ ধরে যেন ভুলতেই পারছে না কপ্টার রাইডের কথা। কত প্রশ্ন। নন্দিনীর উত্তর দিতে দিতে নাভিশ্বাস উঠে আসছে। এবার একটু বিশ্রাম দরকার।
“চলো আমরা হোটেলে যাই” অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলল “স্নান করে একটু ঘুমিয়ে নিই”
“তোমরা একটু রেস্ট নাও। আমি আরও কয়েকটা ছবি তুলে আসি। ফেরার পরে আমরা ইভিনিং-এ ফায়ার ওয়ার্কস দেখতে যাব”
নন্দিনী মাথা নেড়ে গা এলিয়ে দিয়েছিল।
চারটে নাগাদ অর্ণব বেরিয়ে পড়েছিল। এই মুহূর্তে কারও সঙ্গে কথা বলতে আর ভাল লাগছে না। ঘরে শুয়ে সময় নষ্ট করতেও মন চাইছিল না। ভেতরে ভেতরে একটা চাপা উত্তেজনা তাকে গ্রাস করেছিল। সেই অর্গ্যজমিক নীল তাকে হাতছানি দিচ্ছে...
বারবার!
অর্ণব ফলস-এর জলের দিকে এগিয়ে চলল। যতটা এগোনো যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত ফলস-এর রেইলস তরুণীর হাইমেনের মতো তাকে থামিয়ে না দেয়...
...মাথাটা ঘুরতে লাগল। পা দুটো কেঁপে উঠল। একটা অস্বস্তিতে যেন মাটিটা হারিয়ে যাচ্ছে ... এটা কী প্রকৃতির আমন্ত্রণ? না কী হৃদয়ের কম্পন? বিন্দু বিন্দু ঘামে ভরে গেছে প্রশস্ত কপালের আবরণ।
অর্ণব ক্যামেরার লেন্স ওয়াইপার দিয়ে কপালটা মুছল। সারা জীবনের স্বপ্নের ক্যানভাসটা এস ডি কার্ডে বন্দি করে রাখতে চায়। আঙুল কেঁপে কেঁপে উঠছে শাটারের মৃদুমন্দ তরঙ্গে। কানে ভেসে আসছে হাজার তবলার বিরামহীন লহরা। হৃদয় কেঁপে উঠছে এক নিঃশব্দ আলোড়নে।
মুহূর্তের জন্য...
কোথায় যেন মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দেহটা রেলিং-এর ওপর শূন্যে ভাসছে... যেন এপার-ওপারের মাঝে দাঁড়িয়ে শুনছে একটা চেনা পৃথিবীর না-চেনা আলো-আঁধারের মিশ্র রাগ। ক্যামেরাটা হাত থেকে কালো নুড়ির মতো ফসকে পড়ল।
...আর দেখা গেল না।
অর্ণবের কানে দূর থেকে ভেসে আসছে হাজার মানুষের কোলাহল!
নীল মিশে গেল ধূসর থেকে অন্ধকারে...
ছবিটা আঁকতে গিয়েও আঁকা হল না নন্দিনীর। সেই ইন্ডিয়া থেকে যাকে নানা বর্ণে সাজাতে চেয়েছে চেতনার অবগুণ্ঠনের বিভোরে। সেই চেতনাটা আবছায়া মনের একটা ক্যানভাস। যেখানে জীবনের রং বারবার বর্ণহীন হয়ে যাচ্ছে। জীবনের মহা ব্যাপ্তির কালস্রোতের গতিপথ থেকে উদ্ধার করা একটুকরো মুছে যাওয়া রং। এই রং-এর রামধনুর মধ্যে কোথাও ছবিটা আছে। আছে ব্যথার একটা জলছবিও। অ্যাক্রিলিকে এঁকে লাভ নেই। কখন আবার মুছে যায়...
কিন্তু কোথায়?
ফেসবুকে নীল ধূসর থেকে অন্ধকারে মিশে যাওয়ার একটা ছবি কম্পিউটারে এঁকে পোস্ট করে দিল। যেন তার মধ্যেই জীবনের ঝংকার খুঁজছে।
ঝংকারটাই তো জীবন!
হয়ত তা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন আকারে। স্পন্দন জাগায় নানা রং-এর রামধনু ছড়ানো ব্ল্যাংক ক্যানভাসে। নন্দিনীর জীবনটা বোধহয় সেই চেনা ছবির অচেনা রূপ আঁকতে চাইছে এক বিশেষ লক্ষ্মণরেখার ঘেরাটোপের মধ্যেই। জাগতিক প্রাণোচ্ছল জীবনের প্রেক্ষাপটে একটা নিজস্ব বিউটি। বিউটি অ্যাট ইটস বেস্ট। আবরণে ঢাকা, ধোঁয়াশায় ঘেরা অস্পষ্ট এক স্বপ্ন!
এমন তো কোনো কথা নেই, যে সৌন্দর্যটা প্রকৃতির অ-দেখার মধ্যেই লুকিয়ে থাকতে পারে? জীবনের বৈচিত্র্যের মধ্যেও তো তাকে খুঁজে নেওয়া যায়? না-ই বা বাধা পড়ে রইল পঞ্চবটী বনের কুটিরের চারপাশে এঁকে দেওয়া লক্ষ্মণরেখায়! সে তো পুরাণের কথা। গণ্ডির বাইরে পা বাড়ালেই রাবণের হাতছানি! কিংবা মোহময় স্বপ্নের হনন।
একজন ফেসবুকে ছবিটা দেখে কমেন্ট করল “আচ্ছা, আপনি কী স্বপ্ন দেখেন?”
“কেন?”
“ছবিটা দেখে মনে হল, আপনি স্বপ্নের তুলি দিয়ে ছবিটা এঁকেছেন”
নায়েগ্রা ফলস-এর রং-এর সমন্বয় কী স্বপ্নের প্রতিবিম্ব?
নন্দিনী তো বাস্তবের রং-টাই এঁকেছে। তার জীবনের কঠিন বাস্তব। তার জীবনের একটা অধ্যায়।
“কেন বলুন তো?”
“রং-টা ঠিক কেমন জানি লাগছে”
কোন রং দিয়ে আঁকা হলে ক্যানভাসটা প্রাণ পাবে? বেগুনি, ঘন নীল, নীল, সবুজ, হলুদ, কমলা, না কি লাল?
ওই রংগুলোই খুঁজছে লোকটা। ধূসর আর অন্ধকারের কোনো রং তো আলাদা করে নেই। মানুষ শুধু চেনা রং-এই ছবিটা দেখতে চায়। অজানা রং নিয়ে ভাবে না। কিন্তু সেই অজানা রং দিয়েই তো জীবনের ছবি আঁকা হয়।
সে রংটা কী?
সেই রং খোঁজাই তো আসল কাজ। অথচ সবাই ভুলে যায় সে কথা। হয়তো বা ক্কচিৎ কখনো, মাঝে মাঝে কোনো নিঝুম দুপুর অথবা স্তব্ধ মাঝরাতে হঠাৎ সেই রংটা স্মৃতির মশারি সরিয়ে উঁকি মারে একটা ছোট্ট মৌটুসি পাখির মতো। ডাক দেয় কোথাও চলে যাওয়ার।
অন্য কোথাও। অন্য কোনোখানে।
নন্দিনী স্মৃতির আলপথ ধরে জীবনের ধানখেতের মধ্য দিয়ে হাঁটতে শুরু করল, সেই অজানা অচেনা গন্তব্যের সন্ধানে।